সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মাগুরায় ইউএনওর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মাগুরা জেলা বিএনপির ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা দেখা হলো না সন্তানের মুখ মাগুরায়  কৃষকদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত মাগুরায় ১৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ ০১ জন আসামী গ্রেফতার মাগুরায় জাতীয় বিপ্লবী ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে মাগুরায় কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগ, গ্রেফতার ৬ মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক এর জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। মাগুরায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত মাগুরা প্রেসক্লাবে নতুন ৩ জনকে আজীবন সদস্য প্রদান

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ১৮ মামলার আসামী বাদীর পরিবার

বিশেষ প্রতিনিধি  :
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৪ Time View

মাগুরায় বেঙ্গাবেরইল গ্রামে জাহিদ নামে এক দিনমজুর হত্যাকাণ্ডের মামলা মিমাংসা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বাদির পরিবার সংশ্লিষ্টদের নামে মাগুরা দ্রুত বিচার ও আমলি আদালতে ১৮টি মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে।

নিহতের বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগমকে হত্যা মামলা তুলে নিতে দুই বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি করে দিতে আসামীরা স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা। যার সহযোগিতায় আদালতে এসব মামলা দায়েরের মাধ্যমে নিহত জাহিদের অসহায় পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে করে বানোয়াট মামলার জাতাকলে পড়ে ওই গ্রামের অন্তত ৪১ টি কৃষক পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষের জীবন এখন জটিল ধাঁধাঁয় ঘুরপাক খাচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের  বেঙ্গাবেরইল গ্রামের মানুষ দুটিভাগে সামাজিক দলাদলিতে বিভক্ত। কিন্তু ওই গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী কুদ্দুস মোল্লার ছেলে জাহিদ নেই কোনো দলেই। অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে চলে সংসার। অথচ একখণ্ড জমি নিয়ে গ্রামের দুই প্রতিবেশির মধ্যাকার সংঘর্ষে বলি হতে হয়েছে তাকেই।

গত ২০ জুন দুুপুরে ওই গ্রামের আনার মোল্যা বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর তোলার উদ্দেশ্যে মাটি ভরাট করতে গেলে বাধা দেয় তারই চাচাতো ভাই আশরাফ মোল্যার পরিবার। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

 

এ সময় হট্টগোলের শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে নামতেই আশরাফ মোল্যার লোকজন আনার মোল্যার ভাগ্নে সম্পর্কীয় জাহিদকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনার পর আনার মোল্যার প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরেও হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

এই হত্যাকাণ্ড এবং বাড়িঘর ভাংচুরের বিষয় নিয়ে ঘটনার পরদিন নিহত জাহিদের মা রাবেয়া বেগম বাদি হয়ে সদর থানায় ২৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

অন্যদিকে প্রতিপক্ষে একই গ্রামের আবু বক্কার মোল্যার ছেলে শরিফুল ইসলাম ২৮ জুন তারিখে সুনির্দিষ্ট ৩২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

অথচ পালটা পালটি ওই মামলার পরও হত্যা মামলাটি মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে জাহিদ হত্যা মামলার বাদি ও পরিবার সংশ্লিষ্টদের নামে ১৮টি মামলার সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। মামলার নথিতে দেখা যায় নিহত জাহিদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের ৮ হতে ১৫ টি মামলায় আসামী করা হয়েছে।

আদালতে দায়েরকৃত ওইসব মামলা সূত্রে দেখা গেছে, নিহত জাহিদের পরিবার সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা মামলা থেকে ছেলে মেহেদিকে রক্ষা করতে বাবা আশরাফ মোল্যা ২৭ আগস্ট তারিখে ৪৩ জনকে সুনির্দিষ্ট আসামী করে লুটপাটের মামলা (৭০/২৪) করেছেন। এ মামলার ১ নং আসামী আনারুল এবং ৪৩ নং আসামী বকুল। আবার একই ঘটনা উল্লেখ করে অপরিবর্তিত শব্দ-বর্ণ-বাক্যে ওই ৪৩ জনকেই আসামী করে আশরাফ মোল্যা তার ভাগ্নে নিটু মোল্যাকে দিয়ে একই তারিখে আরেকটি মামলা (৬৯/২৪) দায়ের করিয়েছেন। উভয় মামলার আইনজীবীও ছিলেন একই ব্যক্তি আবু নইম মিলন।

আবার একই গ্রামের হাছেদ আলি মোল্যা হত্যা মামলার অন্যতম আসামী দুইপুত্র সাজ্জাদ এবং হাসানকে রক্ষা করতে গত ১৯ আগস্ট এবং ২০ আগস্ট তারিখে হত্যাকাণ্ড পরবর্তি একই তারিখের ঘটনা উল্লেখ করে আমলি আদালতে দুটি লুটপাটের মামলা দায়ের করেছেন। এখানেও আইনজীবী সেই আবু নইম মিলন।

অপরদিকে হত্যা মামলার পর ২৮ জুন শরিফুল ইসলাম ওই গ্রামের প্রতিপক্ষ ২২ জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করলেও ১৮ সেপ্টে¤॥^র তারিখে ছোট ভাই কামরান হোসেনকে দিয়ে আদালতে পূর্বের ঘটনা উল্লেখ করে আবার মামলা করিয়ছেন। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে ৪০ জনকে।

একই বর্ণনা দিয়ে ভিন্ন তারিখে দুটি মামলা করেছে জাবের হোসেন যার একটি মামলায় ১৪ জন ও অপর মামলায় ৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে। জাবের হোসেন হত্যা মামলার আসামী আলতাফ মোল্লার ছেলে। এই মামলার আইনজীবী ও আবু নইম মিলন।

একইভাবে হত্যা মামলার আসামীদের পক্ষে পরিবারের অল্প বয়সী ও নারী সদস্য জেলেখা খাতুন, সাগরিকা খাতুন, রুনা, স্বপ্না খাতুন, ফাতেমা, ফুলজান বেগম, মাফুজ মোল্যা, লিয়াকত হোসেনকে দিয়েও বিভিন্ন রকম মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর সবকটি ক্ষেত্রেই প্রায় একই বিবরণে “রাজনৈতিক পট পরিবর্তন” এর বিষয়টি মামলা দায়েরে বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে মাগুরা জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু নইম মিলনকে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার মামলার বাদীরাও হত্যা মামলার আসামীদের ঘনিষ্টজন।

নিহত জাহিদের মামা মন্টু মোল্যা জানান, হাছেদ আলি সহ আসামী পক্ষের আরো অনেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। দুই বিঘা জমি, নগদ টাকা ছাড়াও নানারকম প্রস্তাব দিয়েছে। জাহিদের মারা যাওয়ায় সংসার চলছেই না। তারপরও তার বৃদ্ধ মা কোনো কিছুর বিনিময়ে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় তারা এখন একজন রাজনৈতিক নেতাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ঘটনা নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে এতগুলো মামলা দিয়ে আমাদের নাজেহাল করছে। আবার হত্যা মামলার আসামী হয়েও কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাবে ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।

থানায় মামলা করার পরও আদালতে একই ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা সৃষ্টির বিষয় নিয়ে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আকবর কল্লোল, সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবলু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগর সহ বিজ্ঞ আইনজীবীরা এই ধরণের ঘটনাকে “এবিউজ অব দি প্রসেস অব দি কোর্ট” এবং আইনজীবীদের “ম্যাল প্রাকটিস” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, একটি ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা হতে পারে না। কিন্তু মামলাগুলো আদালতে করা হয়েছে বিধায় এটি তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে দেয়া হলে নিরাপরাধ মানুষ যাতে শাস্তি না পায় কিংবা হয়রানির শিকার না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102